1. info@dailysatkhirdiganta.online : সাতক্ষীরা দিগন্ত : দৈনিক সাতক্ষীরা দিগন্ত
  2. info@www.dailysatkhirdiganta.online : দৈনিক সাতক্ষীরা দিগন্ত :
শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫, ০৯:০৩ পূর্বাহ্ন

সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিরোধে ইসলামের দিক- নির্দেশনা 

প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত: সোমবার, ১৪ জুলাই, ২০২৫
  • ২০ বার পড়া হয়েছে

মাওলানা শামীম আহমেদ পাবনা

 

ইসলাম এমন এক জীবনবিধানের নাম, যেখানে মানুষের দ্বীন-ধর্মের পাশাপাশি জীবনধারণের কথাও আলোচিত হয়েছে। মানবজীবনের সব সমস্যারই সমাধান রয়েছে প্রিয় ধর্মে। এমনকি সড়কে চলাচল ও নিরাপত্তার বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি নাগরিককে সচেতন হয়ে রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বিষয় সরানোর নির্দেশের পাশাপাশি কোনো চালক বা অন্য কারও ত্রুটির ফলে কেউ নিহত হলে সে চালক কিংবা অপরাধীর শাস্তির বিধানও রেখেছে ইসলাম।

 

একজন মুমিন সড়কে তার নিজের অধিকারের ব্যাপারে যেমন সচেতন থাকবে, তেমনি অন্যের অধিকারের ব্যাপারেও সচেতন

থাকবে। সড়ককে এমনভাবে ব্যবহার করতে পারবে না, যেন তার এ ব্যবহার অন্যের ভোগান্তির কারণ হয়। এমন কিছু সড়কে ফেলে

রাখতে পারবে না, যা অন্যের কষ্টের কারণ হয়। নিজে তো ফেলবেই না, বরং কষ্টদায়ক কোনো বস্তু পড়ে থাকলে সে তা সরিয়ে দিয়ে রাস্তা নিরাপদ করবে।

 

এক সাহাবি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বললেন, হে আল্লাহর নবী! আমাকে এমন একটি আমল বলে দিন, যার দ্বারা আমি উপকৃত হতে পারব। তিনি বললেন, ‘মুসলিমদের সড়ক থেকে কষ্টদায়ক জিনিস দূরে সরিয়ে রাখো।’ (মুসলিম : ৬৮৩৯)। রাস্তাঘাট থেকে কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে রাখাকে ঈমানের অঙ্গ বলে হাদিসে ঘোষণা রয়েছে।

 

অন্য একটি হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা রাস্তার হক আদায় করো।’ সাহাবিরা জিজ্ঞাসা করলেন, রাস্তার হক কী ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.)? তিনি বললেন, ‘দৃষ্টি অবনত রাখা, কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে রাখা, সালামের উত্তর প্রদান, সৎকর্মে আদেশ ও অসৎকর্মের নিষেধ করা।’ (বুখারি : ২৪৬৫)

 

সড়কে চলতি পথে দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় জানমালের। হতাহত হয় বহু মানুষ। চালকদের অদক্ষতা, অসতর্কতা, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, অনিয়ম ও দায়িত্ববোধে অবহেলা, আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়া এসব দুর্ঘটনার প্রধান কারণ। ক্ষেত্রবিশেষে যাত্রীসাধারণ ও পথচারীর দায়ও কম নয়! তাই জীবন বাঁচাতে সব শ্রেণিরই সতর্কতা কাম্য। ইসলাম এক্ষেত্রেও মানুষকে সচেতন করেছে। ইসলামের নির্দেশনা মেনে চললে সুরক্ষিত হবে আমাদের জীবনযাত্রা এবং পরকালেও মিলবে অফুরন্ত সওয়াব।

 

যানবাহনের নিয়ন্ত্রিত গতি

যানবাহনে চালকের ভূমিকা হতে হবে স্বাভাবিক ও সুনিয়ন্ত্রিত। সরকারিভাবে রাস্তার বিভিন্ন গতিসীমা নির্ধারিত আছে, সেই গতিসীমা মেনে চলা অপরিহার্য। দ্রুতগতিতে যানবাহন চালানো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।

 

চলাফেরার ক্ষেত্রে ধীরস্থিরতা বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। এ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ধীরস্থিরতা আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে আর তাড়াহুড়ো শয়তানের পক্ষ থেকে।’ (বায়হাকি : ২০৭৬৭)। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘রহমানের বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে অত্যন্ত বিনম্রভাবে চলাফেরা করে।’ (সুরা ফুরকান : ৬৩)

 

দায়িত্ববোধসম্পন্ন চালক নিয়োগ

চালকদের অদক্ষতা, অসচেতনতা ও অসাবধানতার কারণে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে। সময়ানুবর্তিতা রক্ষা না করা, বেপরোয়াভাবে যানবাহন চালানো, মাদক গ্রহণ করে গাড়ি চালানো ইত্যাদি কারণে কেড়ে নেয় অসংখ্য মানুষের প্রাণ। সড়ক হয়ে ওঠে অনিরাপদ। অথচ রাসুল (সা.) বলেন, ‘প্রকৃত মুসলিম ওই ব্যক্তি, যার হাত ও মুখ থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকে।’ (বুখারি : ৯)। চালক যদি দায়িত্ব সম্পর্কে সজাগ থাকে, তা হলে আশা করা যায় তার দ্বারা নিরপরাধ কেউ আঘাতপ্রাপ্ত হবে না ইনশাল্লাহ।

 

আইন মেনে চলা

বাস হোক, ট্রাক হোক, ট্রেন হোক বা অন্য যেকোনো যানবাহন- সবার ট্রাফিক আইন মেনে চলা চাই। সড়কের বিপরীত দিকে গাড়ি চালানো, রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট বা রুট পারমিট ছাড়া মোটরযান ব্যবহার করা, অতিরিক্ত মাল বা অনুমোদিত ওজনের বেশি নিয়ে গাড়ি চালানো- এসব শরীয় দৃষ্টিকোণ থেকে অবৈধ। এসব আইন ঠিকমতো মেনে চললে সড়ক দুর্ঘটনা অনেকটাই কমে আসবে। চালক বা যাত্রী সবাইকে মনে রাখতে হবে, ন্যায়সঙ্গতভাবে নিয়ম মেনে চললেই শান্তি।

চালক, যাত্রী, পথচারী ও সড়ক নিরাপত্তার দায়িত্বশীল সবাই নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে সজাগ ও সচেতন হলেই দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব। চালকদের উদাসীনতা, ট্রাফিক আইন না মানা, দ্রুতগতিতে যানবাহন চালানো, ওভারটেক করা; অন্যদিকে পথচারীর মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে রাস্তা পার হওয়া, যানবাহনে অতিরিক্ত যাত্রী বহন ইত্যাদি কারণে বড় বড় দুর্ঘটনা ঘটে। ইসলাম সবসময়ই দায়িত্বসচেতন হওয়ার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছে।

 

হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেন, ‘প্রতিটি মানুষই দায়িত্বশীল। সুতরাং প্রত্যেককে অবশ্যই তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।’ (বুখারি : ২৫৫৮)। অন্য হাদিসে আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘খবরদার! তোমরা রাস্তায় বসে থেকে রাস্তা দখল করবে না। একান্ত যদি বসতেই হয়, তা হলে রাস্তার হক আদায় করবে।’ (বুখারি : ২২৯৭)

 

তাই আসুন, সবাই যার যার দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হই। নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থায় কার্যকর ভূমিকা রাখি। মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন সব ধরনের দুর্ঘটনা থেকে আমাদের রক্ষা করেন। আমিন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  
© দৈনিক সাতক্ষীরা দিগন্ত
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট