ডেক্স নিউজ দৈনিক সাতক্ষীরা দিগন্ত
মূল দাবিতে যাওয়ার আগে সংক্ষেপে সাতক্ষীরা জেলার সংসদীয় আসনের ইতিহাস তুলে ধরা যাক
১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরা তখন খুলনা জেলার একটি মহকুমা হিসেবে পরিচিত ছিল। সে সময় সাতক্ষীরা নামে কোনো পৃথক সংসদীয় আসন ছিল না; খুলনার আসন থেকেই সাতক্ষীরার জনগণকে প্রতিনিধিত্ব করা হতো।
১৯৮৪ সালে সাতক্ষীরাকে জেলা ঘোষণা করা হয়।পরবর্তীতে, ১৯৮৬ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশন সারা দেশে আসন পুনর্বিন্যাস করে এবং সাতক্ষীরায় আসন সংখ্যা ৫টি করা হয়:
• সাতক্ষীরা-১: কলারোয়া, তালা
• সাতক্ষীরা-২: সাতক্ষীরা সদর
• সাতক্ষীরা-৩: আশাশুনি
• সাতক্ষীরা-৪: কালিগঞ্জ, দেবহাটা
• সাতক্ষীরা-৫: শ্যামনগর
এটা দীর্ঘ সময় ধরে ছিল। কিন্ত ২০১৮ সালে তৎকালীন নির্বাচন কমিশন অযৌক্তিকভাবে নতুন আসন পুনর্বিন্যাসে সাতক্ষীরার আসন সংখ্যা কমিয়ে ৪টি করে:
• সাতক্ষীরা-১: কলারোয়া, তালা
• সাতক্ষীরা-২: সাতক্ষীরা সদর
• সাতক্ষীরা-৩: দেবহাটা, আশাশুনি ও কালিগঞ্জের ৪টি ইউনিয়ন
• সাতক্ষীরা-৪: শ্যামনগর ও কালিগঞ্জের ৮টি ইউনিয়ন
উল্লেখ্য, জাতীয় সংসদের আসনের সীমানা প্রতি দশকে একবার, জনগণনার (census) তথ্য ও ভোটার সংখ্যার ভিত্তিতে পুনর্বিন্যাসের বিধান রয়েছে।
নতুন করে আসন পুনর্বিন্যাসের লক্ষ্যে গত ১৬ জুলাই ২০২৫ তারিখে একটি ৯ সদস্যবিশিষ্ট কারিগরি কমিটি গঠিত হয়। উক্ত কমিটি আসন পুনবিন্যাসে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনায় নেন:
১. জনসংখ্যা ও ভোটার তালিকা অনুযায়ী বিশ্লেষণ।
২. প্রশাসনিক ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা (উপজেলা কাঠামো, যোগাযোগ ব্যবস্থা, নদী ও সেতু ইত্যাদি)।
৩. প্রতি আসনে গড় ভোটার সংখ্যা ৪০,০০০–৪২,০০০।
এই প্রক্রিয়ার ভিত্তিতে সাতক্ষীরার আসনগুলো পুনর্গঠন করা হয় এভাবে:
• সাতক্ষীরা-১: কলারোয়া, তালা
• সাতক্ষীরা-২: সাতক্ষীরা সদর
• সাতক্ষীরা-৩: কালিগঞ্জ, দেবহাটা
• সাতক্ষীরা-৪: শ্যামনগর, আশাশুনি
আমাদের আপত্তি ও যৌক্তিকতা:
বর্তমানে যেভাবে আসন বিভাজন করা হয়েছে, সেখানে এক দৃষ্টিতে প্রশাসনিক অখণ্ডতা বজায় থাকলেও ভৌগোলিক বাস্তবতা ও স্থানীয় মানুষের দুর্ভোগ বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ (ভৌগোলিক আকারে) উপজেলা শ্যামনগর এর সাথে আরেকটি বৃহৎ উপজেলা আশাশুনি কে একত্র করে একটি মাত্র আসনে রূপান্তরিত করা হয়েছে—যা কার্যত অযৌক্তিক।
• শ্যামনগর ও আশাশুনি দুটি উপজেলা মানচিত্রে পাশাপাশি হলেও তাদের মধ্যে সরাসরি কোনো পাকা সড়ক যোগাযোগ নেই।
• যোগাযোগের ক্ষেত্রে সাধারণ জনগণকে দীর্ঘপথ ঘুরে যাতায়াত করতে হয়।
• প্রশাসনিক কার্যক্রম, রাজনৈতিক অংশগ্রহণ, এবং নাগরিক সেবা প্রদানে এই বিন্যাস বড় ধরনের বাধা সৃষ্টি করবে।
আমাদের দাবি:
দীর্ঘদিনের অবহেলিত, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত ও যোগাযোগে পিছিয়ে পড়া এই জনপদের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে ৫টি আসনের পূনর্বহালের দাবি জানিয়ে আসছে। আমরা বিশ্বাস করি,
➡️ মানুষের ন্যায্য প্রতিনিধিত্ব
➡️ কার্যকর জনসেবা
➡️ সহজ প্রশাসনিক যোগাযোগ এবং
➡️ ভৌগোলিক বাস্তবতা
এই সবকিছুকে সম্মান জানিয়ে, সাতক্ষীরার আগের ৫টি সংসদীয় আসন পুনর্বহালের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট আকুল আবেদন জানাচ্ছি।
কলমেঃ
শেখ আকতার উদ্দীন আহমেদ
বিশিষ্ট ব্যাংকার ও কলামিস্ট।