মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন শ্যামনগর উপজেলা ক্রাইম রিপোর্টার
সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কলবাড়ী নেকজানিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়। অপরূপ প্রাকৃতিক পরিবেশে ঘেরা বিদ্যালয়টি ১৯৭৫ সালের জানুয়ারিতে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত শিক্ষা বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।
বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ আন্তরিকতা, নিষ্ঠা ও সৃজনশীলতায় শিক্ষার্থীদের পাঠদান করে যাচ্ছেন। কর্তৃপক্ষও সবসময় শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ গঠনে নিবেদিত। ফলস্বরূপ, এই বিদ্যালয়ের অনেক প্রাক্তন শিক্ষার্থী আজ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিষ্ঠিত ও গুরুত্বপূর্ণ পেশায় নিয়োজিত।
বিদ্যালয়টি বছরের পর বছর পাবলিক পরীক্ষায় ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করে আসছে। প্রতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় অধিকাংশ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয় এবং অনেকেই মেধা তালিকায় স্থান পায়। এর মাধ্যমে বিদ্যালয়টি থানা পর্যায়ে বারবার শীর্ষস্থান অর্জন করেছে।
তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, প্রতিষ্ঠানটির অবকাঠামোগত অবস্থা এখনো উন্নয়ন বঞ্চিত। যুগোপযোগী শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যে পরিমাণ শ্রেণিকক্ষ, বিজ্ঞানাগার, কম্পিউটার ল্যাব, গ্রন্থাগার কিংবা খেলার মাঠ প্রয়োজন, তার কিছুই বিদ্যালয়ে নেই।দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে শিক্ষার্থীরা পাঠ গ্রহণ করছে। বর্ষা মৌসুমে পানি জমে থাকা, ছাদ চুইয়ে পানি পড়া ও কক্ষের সংকটে পাঠদান ব্যাহত হয়। শিক্ষকদের জন্য পর্যাপ্ত বসার স্থান ও অফিস সুবিধাও সীমিত।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সচেতন অভিভাবকরা বারবার অবকাঠামো উন্নয়নের দাবি জানিয়ে এলেও আজও তা বাস্তবায়িত হয়নি। অথচ, যদি অবকাঠামোগত উন্নয়ন হতো, তাহলে এই বিদ্যালয়টি শুধুমাত্র একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবেই নয়, বরং পুরো অঞ্চলের শিক্ষার আলো ছড়ানো কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হতে পারতো।
আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন শ্রেণিকক্ষ, বিজ্ঞানাগার, গ্রন্থাগার, কম্পিউটার ল্যাব থাকলে শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশ ও পড়াশোনায় আগ্রহ আরও বাড়তো।
বিদ্যালয়টি সুন্দরবনের একেবারে কোলঘেঁষে হলেও, এখানকার মানুষ বছরের পর বছর শিক্ষার আলোয় নিজেদের বদলে ফেলছে। তবে উন্নয়ন না হওয়ায় আগ্রহ হারাচ্ছে অনেকে।
এ প্রসঙ্গে বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক সালাউদ্দিন আল গালিব জিকো বলেন, বিভিন্ন কারণে আমাদের বিদ্যালয়ের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হয়নি। যদি অবকাঠামো উন্নয়ন হয়, শিক্ষাব্যবস্থা আরও উন্নত হবে এবং ছাত্রছাত্রীরাও স্কুলমুখী হবে।
তিনি আরও জানান, শিক্ষার্থীদের মানসিক ও নৈতিক বিকাশে সুস্থ পরিবেশ দরকার।
উল্লেখ্য, তিনি একজন বিশিষ্ট রাজনৈতিক গবেষক ও বিশ্লেষক হিসেবেও পরিচিত।
অতএব, সময় এসেছে কলবাড়ী নেকজানিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পূর্ণাঙ্গ অবকাঠামো উন্নয়ন, আধুনিকীকরণ ও রক্ষণাবেক্ষণের উদ্যোগ নেওয়ার।এটি শুধু শিক্ষার মানোন্নয়ন নয়, বরং সুন্দরবনের উপকণ্ঠে একটি আলোকিত সমাজ গঠনের জন্য এখন সময়ের দাবি। স্থানীয়রা আশা করছেন—প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট দপ্তর দ্রুত উদ্যোগ নিয়ে বিদ্যালয়টির নতুন ভবন, বিজ্ঞানাগার ও অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করবেন।
তাতে আগামী প্রজন্ম সুশিক্ষায় গড়ে উঠবে, সমাজ হবে আরও সচেতন ও আলোকিত।