সঞ্চিতা সরকার, খুলনা ক্যাম্পাস প্রতিনিধি।
“মনের মধ্যে যখন খুশি, এই ছবিটি আঁকি, এক পাশে তার জারুল গাছে, দুটি হলুদ পাখি,রোজ নিশীথে একলা থাকার কালে আমায় দিও খানিক তোমার মন” – বলছিলাম সবুজ পাতা, নীল আভায় ছয়টি পাপড়িতে গঠিত আর হলুদ পরাগবিষ্ট জারুল ফুলের কথা। জারুলের রঙে মুগ্ধ হয়ে কবি আহসান হাবীব তার স্বদেশ কবিতায় এভাবেই তুলে ধরেছিলেন জরুল ফুলের সৌন্দর্য।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বসন্ত ও গ্রীষ্মের আগমনে প্রকৃতি যেন নতুন রূপে সেজে ওঠে। এই সময় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে জারুল ফুলের বেগুনি আভা মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের সৃষ্টি করেছে। এই ফুলগুলো সাধারনত এপ্রিল থেকে জুন মাসে ফোটে এবং ফল পরিপক্ব হয় অক্টোবর থেকে জানুয়ারি মাসের মধ্যে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে, যেমন একাডেমিক ভবন ১ এর পিছনে, লেকের পাড়ে, খান বাহাদুর আহসানুল্লাহ্ হলের সামনে, অদম্য বাংলার সামনে জারুল গাছ গুলোতে বেগুনি রঙের ফুল ফুটেছে। চারপাশে যেনো ছড়িয়ে পরছে রঙের এক অনন্য উৎসব।
খুবি ক্যাম্পাস বরাবরই প্রকৃতির নানা রঙে রাঙানো। তবে গ্রীষ্ম আসতেই সেই রঙে যোগ হয়েছে এক অনবদ্য সৌন্দর্য, জারুল ফুলের বেগুনি আভা। এ বিষয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী নুসরাত সুলতানা লুবনা বলেন, “ ক্যাম্পাসে হাঁটতে বের হলেই মনটা ভরে যায়। বিশেষ করে জারুল ফুলের সৌন্দর্যে চোখ জুড়িয়ে দেয়। বেগুনি রঙের এই ফুলগুলো গাছের ডালে ডালে যেমন ফুটে থাকে, তেমনি বাতাসে হালকা দোলায় এক অপূর্ব আবেশ সৃষ্টি করে। শুধু জারুল ফুল নয় আরও বিভিন্ন ফুলের রঙিন ছোঁয়ায় পুরো ক্যাম্পাসটাই যেন এক জীবন্ত ক্যানভাস। সারাদিনের ক্লাস পড়াশোনার ক্লান্তি যেন ভুলিয়ে দেয় এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য”।
অনেক বহিরাগত জানেন না ফুল বা গাছের নাম।তবুও রঙিন ফুল মাটি থেকে কুড়িয়ে নিয়ে বা গাছ থেকে ছিঁড়ে খোপায় গুঁজে নিজেদের সজ্জিত করেন। কেউবা ছবি, সেলফি তুলে উপভোগ করেন সেই সৌন্দর্য। অনেকে আবার ভিডিও করে পোষ্ট করছেন সোস্যাল মিডিয়ায়। বিকালে পরিবারকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরতে আসা ব্যাংক কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম বলেন, “অফিসের ব্যস্ততার পর একটু শান্ত পরিবেশ খুঁজতেই পরিবার নিয়ে আজ বিকেলে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে এলাম। ক্যাম্পাসটা অনেক গাছগাছালিতে ভরা, আর জারুল গাছগুলো এখন পুরোপুরি ফুলে ঢেকে গেছে। বেগুনি ফুলগুলো দেখে মনে হলো, প্রকৃতি নিজের মতো করে সাজিয়েছে জায়গাটা। এমন দৃশ্য শহরের ভেতর খুব একটা দেখা যায় না। আমার ছেলেটা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে ঝরে পড়া ফুল কুড়াতে পেরে খুব খুশি হলো। সত্যি বলতে, এমন পরিবেশে কিছু সময় কাটাতে পারা মানে এক ধরনের মানসিক প্রশান্তি পাওয়া”।
জারুল ( Lagerstroemia speciosa) সৌন্দর্য ছাড়াও একটি ওষুধি গাছ হিসেবে পরিচিত। এর বীজ, ছাল ও পাতা ডায়াবেটিস রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও জ্বর, অনিদ্রা, কাশি ,অজীর্ণতা, কফ, রক্ত অতিসারনাশক সহ দাহজনক এবং শ্রেষ্ঠ বায়ুরোগনাশক হিসাবে মানব কল্যাণে উপকার সাধন করে গাছটি। একদিকে সৌন্দর্য আরেকদিকে ওষুধিগুণ। এমন নানাবিধ ভেষজ গুণসম্পন্ন উজ্জ্বল বেগুনি আভার জারুল ফুলের বাহারি পসরা যেন খুবি ক্যাম্পাসকে এনে দিয়েছে অপরূপ সৌন্দর্যের ছোঁয়া।
ব্যবসায় প্রশাসন ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী কল্লোল রায় বলেন, “খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রূপ ধারণ করে। বর্তমান সময়ে জারুল ফুল শোভা পাচ্ছে এই ক্যাম্পাসে। তাছাড়াও কৃষ্ণচূড়া,লাল শাপলা, হলুদ সোনালু ফুল উল্লেখযোগ্য ভাবে চোখে পরার মতো। আমরা এখন স্মৃতি জমিয়ে রাখছি। যখন এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চলে যাব তখন আমাদের ক্যাম্পাসের এই মুগ্ধতা, সৌন্দর্য আমাদের হৃদয়ে গেঁথে থাকবে।“