মোঃ সৈকত হাবীব,স্টাফ রিপোর্টার ঝিনাইদহ।
আদালত প্রতিবেদক
১৩ বছর পর ঝিনাইদহের ডাকবাংলা পুলিশ ক্যাম্পের সাবেক ইনচার্জ এসআই মিরাজুল ইসলাম হত্যা মামলায় চারজনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। রায়ে চারজনকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও দোষ প্রমাণিত না হওয়ায় ৭ জনকে খালাস দেওয়া হয়।
সোমবার দুপুরে ঝিনাইদহ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক মাহাবুব আলম এই রায় প্রদান করেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন, রাজবাড়ী জেলার নিমতলা গ্রামের আমজাদ হোসেন, লিয়াকত হোসেন, দক্ষিণ দৌলতদিয়া গ্রামের আক্কাস আলী ও ফরিদপুরের ভাটি লক্ষ্মীপুর গ্রামের আলম শেখ।
অন্যদিকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্তরা হলেন, ফরিদপুরের শোভারামপুর গ্রামের শাহীন, গোয়ালচামট গ্রামের মোহাম্মদ সাগর, টাপাখোলা গ্রামের নুরু খা ও যশোরের শেখহাটি খা পাড়ার মনির হোসেন। তাদের মধ্যে আমজাদ হোসেন ছাড়া বাকিরা পলাতক রয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালের ২৩ আগস্ট রাতে দুবৃত্তরা এসআই মিরাজুলকে খুন করে তার ব্যবহৃত মটরসাইকেলটি নিয়ে পালানোর ঝিনাইদহ শহরের সময় বাস মালিক সমিতি অফিসের সামনে দুর্ঘটনায় পড়ে।
পুলিশ ঘটনাস্থলে আসলে আরোহীরা পালিয়ে যায়। সেসময় দেখা যায় মোটরসাইকেলটি এসআই মিরাজুল ইসলামের। পরদিন সকালে সদর উপজেলার হলিধানী এলাকার প্রতাপপুর গ্রামের মাঠে একটি ডোবায় মিরাজুলের হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওইদিনই ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি (তদন্ত) রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
হত্যাকান্ডের ৩৪ দিনের মাথায় ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কনেজপুর গ্রামের আক্কাচ আলীর ছেলে বাবলুসহ তার কয়েকজন সহযোগীকে গ্রেফতার করে এসআই মিরাজুল হত্যার সঙ্গে তারা জড়িত বলে প্রচার করা হলেও তা পরবর্তীতে মিথ্যা প্রমানিত হয়।
ঘটনার প্রায় আড়াই মাস পর মিরাজুল ইসলাম হত্যার মোটিভ উদ্ধার করে পুলিশ। সেই সঙ্গে উদ্ধার হয় মিরাজুলের ব্যবহৃত সরকারী রিভলবার ও ব্যক্তিগত মোবাইল সেট।
পুলিশ হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে সে সময় কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার একতারপুর ভূমিহীনপাড়ার আন্দার আলীর ছেলে মুক্তার হোসেন ওরফে ভাদু, রাজবাড়ি জেলার নিমতলা গ্রামের রহমত শেখের ছেলে লিয়াকত আলী লিয়া ও তার ভাই আমজাদ শেখ, ফরিদপুর জেলার ভাটি লক্ষিপুর গ্রামের আলম শেখ ওরফে আলো, তার স্ত্রী পদ্মা বেগম, গোয়ালন্দ উপজেলার দক্ষিন দৌলতদিয়া গ্রামের ইয়াকুব আলী সরদারের ছেলে আক্কাচ আলী ওরফে বুড়ো আক্কাস এবং রাজবাড়ি জেলার হাটজয়রামপুর গ্রামের হাসমত মোল্লার ছেলে আব্দুর রহিম।
সে সময় পুলিশ জানায়, আন্তজেলা ডাকাতদলের প্রধান ফরিদপুর শহরের দুলাল খার ছেলে নুরু খা ও তার সহযোগী সাহেব আলী, রানা ও সোহাগ এই খুনের সঙ্গে জড়িত এবং ডাকাত সাহেব আলী এসআই মিরাজুলকে পেছন থেকে আঘাত করে মাটিতে ফেলে দেয়।
এজাহারে বলা হয়, মিরাজুলের কাছে থাকা পিস্তল, গুলি, মোটরসাইকেলসহ ছিনতাইয়ের জন্য ডাকাতরা তাকে হত্যা করে। মোটিভ উদ্ধারের পর ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে পুলিশ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জসীট দাখিল করে। সাক্ষ্য প্রমানের ভিত্তিতে সোমবার আদালত উল্লেখিত রায় প্রদান করেন।