শহিদুল ইসলাম,জামালপুর জেলা প্রতিনিধি
সকাল থেকেই ভিড় জমে উঠেছে জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার পাররামরামপুর ইউনিয়নের কলাকান্দা ঝাউডাঙ্গা গ্রামের জে.কে. মডেল হাই স্কুল মাঠে। কেউ লাঠিতে ভর দিয়ে হাঁটছেন, কেউ সন্তানকে কোলে নিয়ে এসেছেন, কেউবা চোখের যন্ত্রণায় মুখ গোমড়া করে বসে আছেন লাইনে। কারণ, আজ এখানে এক বিশেষ দিন—একদিনের জন্য হলেও গ্রামের দরিদ্র মানুষের চোখে আলো ফেরানোর আশায় বসেছে বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসা সেবা ক্যাম্প।
এ আয়োজনের পেছনে আছেন উত্তর রহিমপুর গ্রামেরই কৃতি সন্তান, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক মোঃ শাখাওয়াত হোসাইন। তিনি বিশ্বাস করেন, সমাজের প্রতি কিছু দায় থেকেই যায়। সেই দায়বোধ থেকে গড়ে তুলেছেন শাখাওয়াত হোসাইন মানবসেবা ফাউন্ডেশন—যার বড় উদ্যোগ এই ৩৭তম চক্ষু চিকিৎসা ক্যাম্প।ইতিপূর্বেই তিনি আরো ৩৬ টি ক্যাম্প বিভিন্ন প্রতান্ত এলাকায় পরিচালনা করে এসেছেন।এ ক্যাম্প গুলোতে চিকিৎসা নিয়েছে কয়েক হাজার গরিব ও অসহায় মানুষ।
ক্যাম্পের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় ছিল দেশের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান ইস্পাহানি ইসলামিয়া চক্ষু ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, আমলাপাড়া, জামালপুর। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চলে টানা সেবা। ৮ জন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের দল একে একে মোট ১৭১ জন রোগীকে চিকিৎসা সেবা দেন। তাদের মধ্যে ৫৭ জন কে বিনামূল্যে চশমা বিতরন করেন ১২ জন কে স্বল্পমূল্যে ছানি অপারেশনের জন্য জামালপুর প্রেরণ করা হয় ১০২ জন কে স্বল্পমূল্যে ড্রপ এবং ওষুধ বিতরণ করা হয়। যাঁদের অনেকেই জীবনে কখনো চোখের ডাক্তার দেখাননি।
চোখে সমস্যা থাকা সত্ত্বেও চিকিৎসার সুযোগ না পাওয়া সত্তরোর্ধ্ব রশিদা বেগমের মতো অনেকেই জীবনে প্রথমবারের মতো বিনা খরচে চোখের পরীক্ষা করাতে পেরে আবেগাপ্লুত হন। কেউ পেয়েছেন চশমা, কেউবা পেয়েছেন অপারেশনের জন্য রেফারেল—তাও স্বল্পমূল্যে।
দেখা যায়, চিকিৎসা নিতে আসা প্রত্যেকেই হাসিমুখে বাড়ি ফিরছেন। চক্ষু চিকিৎসার মতো অতি প্রয়োজনীয় একটি সেবা এত সহজে, এত কাছাকাছি পেয়ে তাদের চোখেমুখে প্রশান্তির ছায়া। বহুজনের ভাষায়, এমন সেবা আগে কখনো মেলেনি।যাদের আয়োজনে সেবা আমরা নিতে পেরেছি তাদের জন্য থাকলো অসংখ্য দোয়া যাতে তারা এভাবেই এ ক্যাম্পগুলো পরিচালনা করে আমাদের মত গরিব অসহায় মানুষদের মাঝে অতি প্রয়োজনীয় এমন চিকিৎসা সেবা হাতের কাছেই দিয়ে যেতে পারে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ আলহাজ্ব আব্দুল মান্নাফ।
বিশেষ অতিথি ছিলেন আলহাজ্ব আব্দুর রশিদ (সহ-সভাপতি, জাতীয়তাবাদী দল, পাররামরামপুর ইউনিয়ন শাখা) ও মোঃ আনোয়ার হোসেন (সাংগঠনিক সম্পাদক, একই শাখা)।
সভাপতিত্ব করেন মোঃ রহুল আমিন, প্রধান শিক্ষক, বলারামের চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
চিকিৎসা পরিচালনায় নেতৃত্ব দেন ডাঃ জমির হোসেন (এমবিবিএস, শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ, বরিশাল), মেডিকেল অফিসার, ইস্পাহানি ইসলামিয়া চক্ষু ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল।
এই আয়োজন যেন একদিনের জন্য হলেও বদলে দিয়েছে অসংখ্য মানুষের জীবনের দৃষ্টিভঙ্গি—আক্ষরিক এবং রূপকভাবে। এমন উদ্যোগ শুধু অসহায় মানুষের চিকিৎসা-চাহিদা পূরণ করে না, সমাজে মানবিকতার বার্তাও ছড়িয়ে দেয়।
শাখাওয়াত হোসাইন মানবসেবা ফাউন্ডেশন এই আয়োজনের মাধ্যমে প্রমাণ করেছে, আন্তরিক ইচ্ছা আর সদিচ্ছা থাকলে একটি মানুষের পক্ষেও অনেক কিছু বদলে দেওয়া সম্ভব। তাদের এই পথ চলা অব্যাহত থাকুক, আরও আশার আলো ছড়িয়ে পড়ুক গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে।