মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন, শ্যামনগর উপজেলা ক্রাইম রিপোর্টার।
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আরেক নাম “সুন্দরবন”।
এশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে বঙ্গোপসাগরের উপকূলে বিস্তৃত এই ম্যানগ্রোভ অরণ্য পৃথিবীর অন্যতম জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ স্থান হিসেবে স্বীকৃত। শুধু গাছপালা নয়, এখানকার প্রতিটি প্রাণ, নদী, খাল, কাদামাটি, এমনকি বাতাসেও মিশে আছে রহস্য, সাহসিকতা ও প্রকৃতির এক অপূর্ব কাব্য।
সুন্দরবনের নামকরণ করা হয়েছে ‘সুন্দরী’ গাছ থেকে, যা এখানে ব্যাপক হারে জন্মে। এই বনজুড়ে ছড়িয়ে আছে হাজারো খাল, নদী ও জলাভূমি, যেগুলো ঘিরে আছে অপরূপ গোলপাতা গাছ, যা এর নান্দনিকতা আরও বাড়িয়ে তোলে।এখানে বসবাস করে পৃথিবী বিখ্যাত প্রাণী *রয়েল বেঙ্গল টাইগার*, যাদের সাথে প্রতিদিনের লড়াইয়ে টিকে থাকতে হয় এখানকার অন্য প্রাণীদের, এমনকি মানুষকেও।
সুন্দরবনের সবচেয়ে পরিচিত এবং শোভাময় প্রাণী চিত্রা হরিণ ও মায়া হরিণী। এদের চলাফেরা, ছোটাছুটি, দলবেঁধে নদী পার হওয়া যেন একটি জীবন্ত চলচ্চিত্র।
প্রকৃতির এই অপরূপ চিত্রপটের মাঝেও প্রতিদিন ঘটে চলে বেঁচে থাকার লড়াই। হরিণের জন্য সবচেয়ে বড় শিকারি বাঘ, তবে হুমকি আসে আরও এক ভয়ঙ্কর দিক থেকে—সুন্দরবনের খালে লুকিয়ে থাকা লবণাক্ত পানির কুমীরদের কাছ থেকে।
সম্প্রতি এমনই এক কুমীরের দ্বারা হরিণ শিকারের ঘটনা ভাইরাল হয়েছে, যা আবারও স্মরণ করিয়ে দেয় এই বন শুধু সৌন্দর্যের নয়, বাঁচা-মরার সংগ্রামেরও।একটি ঘটনায় দেখা যায়, একটি চিত্রা হরিণ খাল পার হওয়ার সময় জলের নিচে লুকিয়ে থাকা কুমীর আকস্মিকভাবে তাকে ধরে টেনে নিয়ে যায়। এমন দৃশ্য প্রকৃতির জন্য স্বাভাবিক হলেও সাধারণ মানুষের চোখে তা বেদনাদায়ক।এই বন শুধু বন্যপ্রাণী নয়, স্থানীয় জেলে, মৌয়াল ও বাওয়ালিদের জীবন-জীবিকারও উৎস। তারা প্রতিদিন বনের ভেতরে প্রবেশ করে সংগ্রহ করে মধু, মাছ ও কাঠ।
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা বাঘ, কুমীর ও জোয়ার-ভাটার সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকে।সুন্দরবনের এই বৈচিত্র্যময়তা কেবল জীববৈচিত্র্য নয়, বাংলাদেশের জলবায়ু, পরিবেশ এবং অর্থনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত।
কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন, অতিরিক্ত মানব হস্তক্ষেপ এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে আজ এই বিশ্ব ঐতিহ্য হুমকির মুখে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুন্দরবনকে রক্ষা করা মানে শুধু একটি বন বাঁচানো নয় এটি একটি পুরো বাস্তুতন্ত্র, একটি সংস্কৃতি এবং একটি জাতির অস্তিত্ব রক্ষা করা।
তাই সুন্দরবনের প্রতিটি বাঘ, হরিণ, কুমীর, গাছ, খাল, মানুষ,সবাই মিলেই গড়ে তুলেছে এক মহাবিস্ময়।এখন সময় এসেছে গবেষণা, সংরক্ষণ ও সচেতনতাভিত্তিক উদ্যোগ গ্রহণ করার। যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মও দেখতে পায় সুন্দরবনের এই মায়াবী রূপকথা,যেখানে রাজা বাঘ, রাজকন্যা হরিণ, আর তাদের রাজত্বে শিকারি কুমীর নিয়ে চলে প্রকৃতির অনবদ্য নাট্যশালা।